পরিনমন
(Maturation)
শিখনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম উপাদান হল পরিনমন (Maturation)। শিশু জন্মের পর থেকে ধীরে ধীরে বড়ো হতে থাকে, তখন তার দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের জন্য কোনো প্রকার অনুশীলন বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না, ব্যাক্তির মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই এই যে পরিবর্তন সংঘটিত হয় , তাকেই পরিনমন (Maturation) বলে।
• পরিনমণের সংজ্ঞা
(Definition of Maturation)
মনোবিদ কোলেসনিক (Kolesnick) পরিনমনের সংজ্ঞায় বলেছেন, সহজাত সম্ভাবনাগুলির স্বাভাবিক বিকাশের ফলে ব্যাক্তির গুণগত ও পরিমাণগত পরিবর্তনকেই পরিনমণ বলে। এককথায় সহজাত সম্ভাবনাগুলির বাস্তবায়নই হল পরিনমন (Maturation).
মনোবিদ ম্যাকগিয়ক (McGeoch) বলেন, বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে অনুশীলন ও অভিজ্ঞতার পরিবর্তে প্রধানত জৈবিক কারণে ব্যাক্তির আচরণের পরিবর্তনকেই পরিনমন (Maturation) বলে।
মনোবিদ গেসেল (Gesell) এর মতে, স্বকীয় ও অন্তর্জাত বৃদ্ধিই হল পরিনমন (Maturation)।
• পরিনমনের বৈশিষ্ট্য
(Characteristics of Maturation)
1. বিকাশের প্রক্রিয়া: পরিনমণ হল বিকাশমূলক প্রক্রিয়া।এই প্রক্রিয়ার দ্বারা প্রাণীর আচরন পরিবর্তন ঘটে । এর ফলে হৃৎপিণ্ড,পাকস্থলী প্রভৃতির আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং এগুলির কর্মক্ষমতার বিকাশ ঘটে ।
2. সহজাত ও সর্বজনীন প্রক্রিয়া: পরিনমন ব্যাক্তির জন্মগত সূত্রে প্রাপ্ত সম্ভাবনা এবং সর্বজনীন প্রক্রিয়া।সব শিশুই এই নিয়মেই ছোটো থেকে বড়ো হয়।
3. স্বাভাবিক প্রক্রিয়া: পরিনমন একপ্রকার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।ব্যাক্তির সুস্থতাই পরিনমনের একমাত্র শর্ত।অসুস্থতা পরিনমনে বাধার সৃষ্টি করে।
4. অনুশীলন নিরপেক্ষ : আগেই বলা হয়েছে পরিনমন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, এর জন্য কোনো প্রকার অনুশীলন বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না।তাই পরিনমনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল পরিনমন অনুশীলন নিরপেক্ষ।
5. চাহিদা নিরপেক্ষ : পরিনমনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল পরিনমন চাহিদা নিরপেক্ষ।কারণ পরিনমনের জন্য কোনো চাহিদার প্রয়োজন হয় না, কিন্তু পরিনমনের ফলেই চাহিদার সৃষ্টি হয়।
6. শারীরিক ক্ষমতা অর্জনে সহায়ক : পরিনমন ব্যাক্তির শারীরিক ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে।
7. জৈবিক বিকাশের প্রক্রিয়া : ব্যাক্তির দেহের জৈবিক কেন্দ্রগুলির উপর ভিত্তি করেই পরিনমন সম্পন্ন হয়।
8. আত্মসক্রিয়তা নিরপেক্ষ : পরিনমনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল, এই প্রক্রিয়ার জন্য কোনো প্রকার ব্যাক্তির আত্মসক্রিয়তার প্রয়োজন হয় না।তবে সক্রিয়তা ব্যাক্তির পরিনমণকে ত্বরান্বিত করে।
9. আংশিক জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া : পরিনমন হল একপ্রকার আংশিক জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া, কারণ এই প্রক্রিয়া শিশুর মাতৃগর্ভে শুরু হয়, কিন্তু জীবনের এক পর্যায়ে এসে থেমে যায়, তাই পরিনমন হল একপ্রকার আংশিক জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া।
তাই উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, যে সর্বজনীন স্বাভাবিক, সহজাত , জৈবিক, অনুশীলন ও চাহিদা নিরপেক্ষ প্রক্রিয়া শিশুর বিকাশ ও শারীরিক ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে,তাকেই পরিনমন (Maturation) বলে।
• শিখন ও পরিনমনের মধ্যে পার্থক্য
(Differences between Learning and Maturation)
1. শিখন একটি মানসিক প্রক্রিয়া।
কিন্তু পরিনমন একটি জৈবিক প্রক্রিয়া ।
2. শিখন কৃত্রিম প্রক্রিয়া ।
কিন্তু পরিনমন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
3. শিখনের জন্য শিশুর মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়।
কিন্তু পরিনমনের জন্য শিশুর মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না।
4. শিখন শর্তসাপেক্ষ প্রক্রিয়া ।
কিন্তু পরিনমনের জন্য কোনো প্রকার শর্তের প্রয়োজন হয় না
5. শিখন সারা জীবনব্যাপি প্রক্রিয়া।
কিন্তু পরিনমন ব্যাক্তির নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত চলে।
6. শিখন অনুশীলননির্ভর প্রক্রিয়া, এর জন্য অনুশীলনের প্রয়োজন হয়।
কিন্তু পরিনমন অনুশীলন নিরপেক্ষ প্রক্রিয়া।
7. শিখন ব্যাক্তির জীবনের গুণগত পরিবর্তন ঘটায়।
কিন্তু পরিনমন ব্যাক্তির গুণগত ও পরিমাণগত পরিবর্তন ঘটায় ।
8. শিখন ব্যাক্তির অভিজ্ঞতা নির্ভর প্রক্রিয়া।
কিন্তু পরিনমন ব্যাক্তির অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে না।
সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, শিখন ও পরিনমন উভয়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া শিশুর জ্ঞানার্জনের জন্য।শিশুর শিখনের জন্য পরিনমনের প্রয়োজন হয়।
Thank you
ReplyDeleteWelcome
DeleteTHANKS SIR
DeleteVery good information
ReplyDeleteআরো প্রশ্ন উত্তর চাই ।
ReplyDeleteসঙ্গে থাকো ।
Deleteখুব ভালো হয়েছে।
ReplyDeleteধন্যবাদ ।
DeleteVery good writing
ReplyDeletewow nice information
ReplyDeleteখুব ভালো লেগেছে।
ReplyDelete