Nature/Characteristics of Classical Conditioning
প্রাচীন অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য
শারীরতত্ত্ববিদ আইভান প্যাভলভ (Ivan Pavlov) প্রাচীন অনুবর্তন তত্ত্বের প্রবক্তা । ( আগের প্রশ্নে আমরা প্রাচীন অনুবর্তন কাকে বলে ? এই তত্ত্বের পরীক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করেছি ) তাই এখন আলোচনা করা হবে প্রাচীন অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে -
1. অনুবর্তিত উদ্দীপকের উপস্থাপন : যে উদ্দীপকটিকে অনুবর্তিত করতে হবে ,সেই উদ্দীপকটিকে স্বাভাবিক উদ্দীপকের আগে উপস্থিত করতে হবে। এই কারণে প্যাভলভের পরীক্ষায় ক্ষুধার্ত কুকুরকে খাবার দেওয়ার আগে ঘন্টার্ধ্বনী শোনানো হয়েছিল ।
2. স্বাভাবিক উদ্দীপকের কার্যকারিতা : স্বাভাবিক উদ্দীপকের শক্তি অনুবর্তিত উদ্দীপকের বেশি হয়, যা প্রাচীন অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য।
যেমন : কুকুরের লালাক্ষরণের ক্ষেত্রে খাদ্যবস্তু ঘণ্টাধ্বনির থেকে বেশি শক্তশালী উদ্দীপক ।
3. উদ্দীপক দুটির পর্যায়ক্রমিক উপস্থাপন : বিকল্প বা নিরপেক্ষ উদ্দীপকের রেশ থাকতে থাকতেই স্বাভাবিক উদ্দীপককে উপস্থাপন করতে হবে । সেজন্য প্যাভলভের পরীক্ষায় ঘণ্টাধ্বনির রেশ থাকতে থাকতেই খাবার দেওয়া হত ।
4. উদ্দীপক দুটির পুনরাবৃত্তি : যতক্ষণ না অনুবর্তন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হচ্ছে , ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক উদ্দীপক এবং বিকল্প উদ্দীপক দুটিকে পর্যায়ক্রমে বারবার উপস্থাপন করতে হবে, যা প্রাচীন অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য ।
5. অপানুবর্তন : অনুবর্তন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হওয়ার পর দীর্ঘ সময়ব্যাপি যদি খাদ্যবস্তু দেওয়া না হয়, তবে ক্রমশ লালাক্ষরনের পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকবে এবং একসময় তা বন্ধ হয়ে যাবে, একেই অপানুবর্তন বলে যা প্রাচীন অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য।
6. অনুবর্তনের স্বতস্ফূর্ত প্রত্যাবর্তন : অপানুবর্তনের পরে পুনরায় অনুবর্তন প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনতে আগের মতে পর্যায়ক্রমিকভাবে বিকল্প উদ্দীপকের রেশ থাকতে থাকতেই স্বাভাবিক উদ্দীপকের উপস্থাপন করতে হবে, এবং এর ফলে অনুবর্তনের স্বতস্ফূর্ত প্রত্যাবর্তন ঘটে । যা প্রাচীন অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য।
7. উদ্দীপক নির্দিষ্টকরণ : প্রাচীন অনুবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল যে উদ্দীপকটি অনুবর্তিত হবে তা নির্দিষ্ট করা । স্বাভাবিক উদ্দীপকের সঙ্গে যদি একাধিক গৌণ উদ্দীপক থাকে, তবে যে উদ্দীপকটি অনুবর্তিত হবে তা প্রাণী নির্দিষ্ট করে নেয়।
8. আচরন পৃথকীকরণ ও সামান্যীকরণ : অনুবর্তনের সাহায্যে শিক্ষার্থীরা আচরন পৃথকীকরণ ও সামান্যীকরণ করতে পারে যা প্রাচীন অনুবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ।
Educational Implications of Classical Conditioning
শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন প্রতিক্রিয়ার ব্যবহার
শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন প্রক্রিয়া শিশুর শিখন কৌশলে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে। শিশুর শিখনে প্রাচীন অনুবর্তন প্রতিক্রিয়ার ব্যবহার সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল -
1. শিশুর ভাষাশিক্ষা : শিশু শিক্ষার্থীদের ভাষার বিকাশ ও সঠিক উচ্চারণ করার ক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন প্রতিক্রিয়ার ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো শব্দ বারবার উচ্চারণ করিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের ভাষার বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।
2 . শিশুর শিখন : শিশুর শিখনে বিশেষ করে বর্ন , শব্দ , নামতা ইত্যাদি শিখনে প্রাচীন অনুবর্তন প্রতিক্রিয়ার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
3. অভ্যাস গঠন : শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সু - অভ্যাস গঠনের ক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন প্রতিক্রিয়ার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
4. কু - অভ্যাস দূরীকরণ : শিক্ষার্থীদের কু - অভ্যাস দূরীকরনের ক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন প্রতিক্রিয়ার ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন : বানান ভুল, অশ্লীল উচ্চারণ , মুদ্রাদোষ ইত্যাদি দূর করার ক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন প্রতিক্রিয়ার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
5. প্রাক্ষভিক বিকাশ : অনুবর্তনের ফলই হল মানুষের জীবনের জটিল প্রক্ষোভ বা ভাবাবেগ। তাই শিশুর প্রাক্ষভিক বিকাশে গুরুত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
6. শিক্ষকের আচরন ও অনুবর্তন : প্রাচীন অনুবর্তন প্রক্রিয়া শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক/ শিক্ষিকা উভয়েরই আচরণের পরিবর্তন ঘটে এবং শিশুর শিখন গুরুত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সুতরাং , উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিশুর কু - অভ্যাস দূর করে সু - অভ্যাস গঠনের ক্ষেত্রে ঠিক তেমনই শিশুর বানান , নামতা শিখনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
No comments:
Post a Comment