শিক্ষার ধারণা : সংকীর্ণ অর্থ ও ব্যাপক অর্থ
Concept of Education : Narrow Meaning and Wider Meaning
শিক্ষা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে হলে শিক্ষার সংকীর্ণ অর্থ ও ব্যাপক অর্থ আমাদের গোচরে আনা দরকার ।জন্মের পর থেকে মানুষ শিক্ষাগ্রহণ করে আসছে । অবারিত অভিজ্ঞতা প্রতিনিয়ত তার জ্ঞান ভান্ডারটিকে বৃদ্ধি করে চলেছে । এক্ষেত্রে কখনও পরিকল্পনামাফিক , আবার কখনও পরিকল্পনাহীন ভাবে সে শিক্ষাগ্রহণ করছে । ব্যক্তি যখন ইচ্ছার দ্বারা পরিচালিত হয়ে সচেতনভাবে ও পরিকল্পনা সহকারে শিক্ষাগ্রহণ করে , তখন শিক্ষার অর্থ সংকীর্ণ হয়ে পড়ে । আর যখন পূর্ব - পরিকল্পনা বা সচেতনতা ছাড়াই সে শিক্ষাগ্রহণ করে তখন শিক্ষার অর্থ হয় ব্যাপক ।
নিম্নে উভয় প্রকার অর্থ নিয়েই আলােচনা করা হল -
( ক ) শিক্ষার সংকীর্ণ অর্থ :
(Narrow Meaning of Education) :
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা হল একটি সচেতন এবং নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া । এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য হল ব্যক্তির সুপ্ত সম্ভাবনাসমূহের বিকাশ সাধন করা । মূলত এই শিক্ষার দ্বারা শিশুর মনকে ভারাক্রান্ত করে তােলা হয় । মানুষ দীর্ঘদিন শিক্ষার সংকীর্ণ জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে যে বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে , অর্থ সম্পর্কে ধারণা তা যে কোনও উপায়ে শিশুদের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেওয়াই হল সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার মূল নীতি । এই ধরনের শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে কোনও বিশেষ আর্থ - সামাজিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তৈরি করে দেওয়া হয় । নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে এই শিক্ষা সীমাবদ্ধ থাকে । এছাড়া নির্দিষ্ট পাঠক্রমের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সচেতনভাবে এই শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে ।
অধ্যাপক ম্যাকেঞ্জি , ব্যক্তির ক্ষমতাকে বিকশিত ও অনুশীলন করার জন্য সচেতনভাবে পরিচালিত প্রচেষ্টাকে শিক্ষার সংকীর্ণ অর্থ বলেছেন । প্রয়ােজন এবং পূর্ব পরিকল্পনার ছাপ থাকায় এ ধরনের শিক্ষাকে সংকীর্ণ বলা হয় ।
* শিক্ষার সংকীর্ণ অর্থে ধারণার বৈশিষ্ট্য :
(Charecterstics of Narrow meaning of Education ) :
শিক্ষাকে সংকীর্ণ অর্থে গ্রহণ করার ফলে তার মধ্যে কতকগুলি বৈশিষ্ট্য মূর্ত হয়ে ওঠে । এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল
( ১ ) জ্ঞান বৃদ্ধি :
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিশুর জ্ঞান ভান্ডারটিকে বৃদ্ধি করা । অর্থাৎ শিশুকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পারদর্শী করে তােলা । এক্ষেত্রে সমাজের বয়স্ক ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে শিশুদের উপর সচেতনভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে । নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পাঠ্যসূচি অনুযায়ী পূর্বনির্ধারিত সময় ধরে এই শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে ।
( ২ ) সামাজিক স্বীকৃতি :
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার একটি সামাজিক স্বীকৃতি আছে । সমাজ ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা প্রদানের মাধ্যমে এই স্বীকৃতি প্রদান করে । পরীক্ষার মাধ্যমে শিশু কতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে তা যাচাই করা হয় । তারপর শিশুর শিক্ষামূলক প্রচেষ্টাকে সার্টিফিকেটের মাধ্যমে স্বাগত জানানাে হয় । এই ধরনের শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল যে কোনােভাবে ডিগ্রি , ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেটের অধিকারী হওয়া ।
( ৩ ) মানৰীয় সম্পর্কের অভাব :
এই ধরনের শিক্ষায় কোনও মানবীয় সম্পর্ক গড়ে ওঠার অবকাশ থাকে না । এখানে শিক্ষক - শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হল দাতা - গ্রহীতার । শিক্ষক হলেন পাতা আর শিক্ষার্থী হল গ্রহীতা । শিক্ষক যে জ্ঞান দান করেন তা শিক্ষার্থী গ্রহণ করে নিষ্ক্রিয়ভাবে , ঠিক কলতলায় বসানাে কলসির মতাে । কলসির যেমন শুধুমাত্র জল গ্রহণ করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না , শিক্ষার্থীরও তেমনি জ্ঞান অর্জন করা ছাড়া আর কোনও ভূমিকা থাকে না । শিক্ষকের কাজ হল তার নিজস্ব পরিপূর্ণ জ্ঞান ভান্ডার থেকে এক একটি কণা দিয়ে শিক্ষার্থীর শূন্য ভান্ডারটিকে পুরণ করা । এই ধারণার উপর ভিত্তি করে শিক্ষাক্ষেত্রে কতকগুলি মতবাদ গড়ে উঠেছে । যেমন — স্বর্ণথলির তত্ত্ব , জলের নলের তত্ত্ব ইত্যাদি ।
( ৪ ) চাহিদা অবহেলিত :
ও প্রতিটি শিক্ষার্থীর বিকাশের একটি স্বতন্ত্র গতিপথ আছে । এই ধারণাটিকে এখানে স্বীকার করা হয় না । শিক্ষার্থীরও যে একটি নিজস্ব গঠন প্রচেষ্টা থাকতে পারে কিংবা তারও যে নিজস্ব চাহিদা আছে — তার কোনও মুল্য এখানে দেওয়া হয় না । শিক্ষার্থীকে ভাবা হয় এক তাল মাটি হিসাবে এবং শিক্ষককে ভাবা হয় ছাঁচ হিসাবে । শিক্ষক তার নির্দিষ্ট ছাঁচে শিক্ষার্থীকে গড়ে তােলার চেষ্টা করেন । এখানে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের কোনও মর্যাদা দেওয়া হয় না ।
( ৫ ) প্রয়ােজনমাফিক :
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা হল প্রয়ােজনমাফিক । প্রয়ােজনের তাড়নায় কোনও বিশেষ বিষয়ে অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা অর্জন করাই হল এর মূল উদ্দেশ্য । প্রয়ােজন অনুযায়ী কোনও বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার মধ্যেই এই শিক্ষা সীমাবদ্ধ । এই শিক্ষার গুরুত্ব প্রয়ােজন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পেতে শুরু করে । নতুন ধরনের প্রয়ােজনের তাগিদে আবার নতুন করে অভিজ্ঞতা অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা চলে । পূর্বের অভিজ্ঞতাটি তখন গুরুত্ব হারায় ।
( ৬ ) অপরিবর্তনীয় ও গতিহীন :
এই ধরনের শিক্ষা অপরিবর্তনীয় ও গতিহীন । সমাজের বিবর্তনের ধারার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এটি পরিবর্তনশীল নয় । কিন্তু শিক্ষা এককভাবে একটি গতিধর্মী প্রক্রিয়া । এই প্রক্রিয়ায় গতিধর্মিতা না থাকলে তার কোনও উপযােগিতা থাকে না । ফলে বাস্তবক্ষেত্রে এই শিক্ষা তার প্রয়ােজনীয়তা হারায় । আর এই ধরনের শিক্ষার ফলে শিক্ষার্থীও বাস্তব পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয় ।
উপরিউক্ত আলােচনার ভিত্তিতে সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার ক্ষেত্রে যে বৈশিষ্ট্যগুলি প্রকটভাবে ফুটে ওঠে , তা হল—
( ১ ) সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ ।
( ২ ) বিশেষ বিষয়ের জ্ঞান অর্জনের মধ্যেই নির্দিষ্ট থাকে এই শিক্ষা । উপসংহার
( ৩ ) এই শিক্ষা মানুষ সচেতনভাবে গ্রহণ করে থাকে ।
( ৪ ) শিক্ষার অঙ্গ হিসাবে এই শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের স্বীকৃতি জানানাে হয় ।
( ৫ ) এই শিক্ষা নির্দিষ্ট কোনও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেওয়া হয় ।
সুতরাং উক্ত বৈশিষ্টগুলির ভিত্তিতে বলা যায় যে ,
অপরিবর্তনীয় শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক - শিক্ষার্থীর মধ্যে দাতা - গ্রহীতার সম্পর্কের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীর নিজস্ব চাহিদা ও আগ্রহকে উপেক্ষা করে জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে মানসিক উৎকর্ষতা বিধানের জন্য যে শিক্ষা দেওয়া হয় , তাই হল সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা ।
( খ ) শিক্ষার ব্যাপক অর্থে ধারণা :
(Wider meaning of Education ) :
ব্যাপক অর্থে শিক্ষা বলতে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকে বােঝানাে হয় না । এই শিক্ষা সমাজের জীবনধারার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত । প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সামাজিক পরিবেশের সামগ্রিক প্রভাব হল এই শিক্ষা ।
অধ্যাপক ম্যাকেঞ্জি ব্যাপক অর্থে শিক্ষা সম্পর্কে বলেছেন যে ,
এটি একটি সাধারণ প্রক্রিয়া যার দ্বারা ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন হয় এবং এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির সঙ্গে তার সম্পর্ক , এমনকী যে বিশ্বে সে বসবাস করে সেই বিশ্বের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক অনুধাবন করতে মজার ব্যাপক সমর্থ হয় ।
রেমন্ট শিক্ষার ব্যাপক অর্থ প্রসঙ্গে বলেছেন যে ,
এই অর্থ সম্পর্কে ধারণা শিক্ষা শৈশব থেকে পরিপক্কতার স্তর অবধি একটি আত্মপ্রকাশের প্রক্রিয়া , যার সাহায্যে মানুষ তার নিজের শারীরিক , মানসিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশ সাধনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতিবিধানে সক্ষম হয় ।
হর্নে ( Horne ) আবার ব্যাপক অর্থে শিক্ষাকে অন্যভাবে প্রকাশ করেছেন । তার কাছে ব্যাপক অর্থে শিক্ষা হল উন্নত ধরনের সঙ্গতি বিধানের ক্ষমতা ।
ব্যাপক অর্থে শিক্ষা সম্পর্কে মূল কথা হল যে ,
এই শিক্ষা এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষের অভিজ্ঞতার প্রসারণ ঘটে । এই শিক্ষা ব্যক্তিগত এবং সমাজ - জীবনে সর্বদা উন্নয়ন ঘটাবার চেষ্টা করে । আর এরই ফলে মানুষ সুষ্ঠু সমাধানের পথ খুঁজে পায় এবং আচরণ ধারার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি সাধনে সমর্থ হয় ।
* শিক্ষার ব্যাপক অর্থে ধারণার বৈশিষ্ট্য :
(Charecterstics of Wider meaning of Education ) :
নিম্নে ব্যাপক অর্থে শিক্ষার বৈশিষ্টগুলি আলােচনা করা হল -
( ১ ) জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া :
ব্যাপক অর্থে শিক্ষা সীমিত পরিবেশে সীমিত সময়ের প্রশিক্ষণ নয় । এটি একটি জীবনব্যাপী ছেদহীন প্রক্রিয়া । ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে এই শিক্ষা শুরু হয় এবং মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকে । অর্থাৎ এই শিক্ষার পরিধি / হল জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত । এজন্যই বলা হয় যে , যতদিন বাঁচি ততদিন শিখি । সমগ্র জীবন জুড়ে এই শিক্ষাপ্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে ।
( ২ ) চাহিদা স্বীকৃত :
এই ধরনের শিক্ষায় কোনও অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীর উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয় না । শিক্ষার্থী এখানে আত্মপ্রচেষ্টা এবং আত্মসক্রিয়তার মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাগ্রহণ করে । এই ধরনের শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যালয় বা শিক্ষকের কোনও ভূমিকা নেই , এমনকী পাঠক্রম বা আনুষ্ঠানিক নিয়ম - কানুনেরও সঙ্গে কোনও সম্পর্ক থাকে না ।
( ৩ ) বাস্তব অভিজ্ঞতা :
ব্যাপক অর্থে শিক্ষা অর্জিত হয় বাস্তব সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে । অবাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যে জ্ঞান আহরণ করা হয় , তা কখনােই স্থায়ী হয় না । শিক্ষা বাস্তব পরিস্থিতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা লাভ করে । প্রকৃতপক্ষে সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে ব্যক্তি যে সমস্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করে তাই হল শিক্ষা । এই ধরনের অভিজ্ঞতা কোনও না কোনও ধরনের শিক্ষা অর্জনে সাহায্য করে ।
( ৪ ) সার্থক সঙ্গতিবিধান :
সদা - পরিবর্তনশীল জগতের সঙ্গে সার্থকভাবে সঙ্গতিবিধান করতে সাহায্য করে ব্যাপক অর্থে শিক্ষা । কারণ মানুষ জীবনের চলার পথে যে সমস্ত বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে সেগুলিই সঙ্গতি বিধানের ক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করে । আবার ব্যক্তিকে তার অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য পরিবেশের তাগিদ অনুযায়ী আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে হয় এবং পুরােনাে আচরণ পরিবর্তন করে নতুন আচরণ ধারা অর্জন করতে হয় । আচরণের ক্ষেত্রে এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ , পরিবর্তন ও পুনর্গঠনের নাম হল শিক্ষা ।
( ৫ ) ক্রমবিকাশের প্রক্রিয়া :
ব্যাপক অর্থে শিক্ষা ব্যক্তির বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার সঙ্গে অভিন্ন । এ প্রসঙ্গে ডিউই বলেছেন যে , শিশুর শিক্ষা তার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সমার্থক । এটি একটি স্বতঃপ্রণােদিত এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়া । প্রত্যেক শিশু কতকগুলি সম্ভাবনা নিয়ে জন্মায় । ক্রমবিকাশের ধারার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সম্ভাবনাগুলির পরিস্ফুরণ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে । এই বিকাশের মাধ্যমেই শিশু তার অভীষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হয় এবং প্রতিকুল পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতিবিধানে সমর্থ হয় ।
উপরিউক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপক অর্থে শিক্ষার বৈশিষ্ট্যের যে সমস্ত পরিচয় পাওয়া যায় , তা হল—
১ ) ব্যাপক অর্থে শিক্ষা কোনােরূপ সুনির্দিষ্ট নিয়ম - বহির্ভূতভাবে উপসংহার সম্পাদিত হয় ।
( ২ ) এই ধরনের শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনও ধারা অনুসরণ করা হয় না ।
( ৩ ) কোনও নির্দিষ্ট পাঠক্রম অনুযায়ী এই শিক্ষা সম্পন্ন হয় না ।
( ৪ ) এই শিক্ষা চলে অচেতনভাবে ।
( ৫ ) জীবনের প্রয়ােজনে সকল প্রকার অভিজ্ঞতাই অর্জিত হয় এই শিক্ষার মাধ্যমে ।
সুতরাং এই বৈশিষ্ট্যগুলির ভিত্তিতে বলা যায় যে ,
ব্যাপক অর্থে শিক্ষা হল ব্যক্তির জীবনব্যাপী ক্রমবিকাশের এক ছেদহীন প্রক্রিয়া যা নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা অচেতনভাবে অর্জনের মাধ্যমে তাকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সুষ্ঠু ও সার্থক সঙ্গতিবিধানে এবং সমাজের বহুমুখী দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে । শিক্ষা হল শিশুর উপর সমাজের পরিকল্পনাপ্রসূত প্রভাবের সমষ্টি যা তার ব্যক্তিসত্তার চরম বিকাশ সাধনের মাধ্যমে জীবনের পরম সত্যের উপলব্ধিতে সহায়তা করে ।