আইন প্রণয়নের ক্ষমতা বন্টন এর জন্য তালিকা ব্যবস্থা
(List system for the distribution of legislative power)
ভারতবর্ষের সংবিধান যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান। স্বাভাবিকভাবেই এখানে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা গুলি কে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা -
A. কেন্দ্রীয় তালিকা (Union List) - যে সমস্ত বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের তাকে "লিস্ট I" বা "কেন্দ্রীয় তালিকা"(Union List) বলে।
B. রাজ্য তালিকা (State List) - যে সমস্ত বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাজ্য সরকারের তাকে "রাজ্য তালিকা"(State List) বা "লিস্ট II" বলে ।
C. যৌথ তালিকা (Concurrent List) - যেসব ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার উভয়েরই তাকে "লিস্ট III" বা "যৌথ তালিকা"(Concurrent List) বলে।
ভারতীয় সংবিধানের শিক্ষা সংক্রান্ত ধারা
(Articles in Indian Constitution on Education)
ভারতীয় সংবিধানের ভূমিকায় একটা প্রস্তাবনা রয়েছে , আমরা আগের প্রশ্নেই আলোচনা করেছি। 1951 সালের 26 শে জানুয়ারি যে সংবিধান চালু করা হয় সেখানে ঘোষণা করা হয় ভারত একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। 1976 সালে 42 তম সংশোধনীর সময় আরও দুটি নতুন শব্দ যুক্ত হয়। সেই শব্দ দুটি হল "সমাজতান্ত্রিক" এবং "ধর্মনিরপেক্ষ"।
শিক্ষায় সমতা বিধানের ক্ষেত্রে সংবিধানে শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধারা রচনা করা হয়েছে , তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ধারা হল -
• 14 নং ধারা : ভারত রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে আইনের চোখে সকলেই সমান বা সকলেই সমভাবে আইনি অধিকার লাভ করবে অর্থাৎ আইনের দৃষ্টিতে সমতা।
• 15 নং ধারা : জাতি-ধর্ম-বর্ণ , জন্মস্থান প্রভৃতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র কোন প্রকার বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না।
• 15 (1)নং ধারা : ভারতীয় সমাজে শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীদের সমান অধিকার থাকবে অর্থাৎ নারী শিক্ষার অধিকার।
• 15 (3) নং ধারা : রাষ্ট্র নারী এবং শিশুদের জন্য যে কোন বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
• 16 নং ধারা : কোনো নাগরিককে রাষ্ট্র সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ধর্ম , জাতপাত , লিঙ্গ , বংশ , বাসস্থান , জন্মস্থান ইত্যাদি কারণে অযোগ্য বলে বিবেচিত বিবেচনা করতে বা তার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারবে না অর্থাৎ সরকারি চাকরি সংক্রান্ত সমসুযোগ।
• 21 (1) নং ধারা : 6 থেকে 14 বছর বয়সী সমস্ত শিশুকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রদান করা রাষ্ট্রের কাজ ।
• 28 নং ধারা : বিশেষ ধরনের প্রতিষ্ঠান ধর্মীয় পূজা এবং ধর্মীয় শিক্ষা দানের স্বাধীনতার কথা এই ধারায় বলা হয়েছে।
• 29 নং ধারা : সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বাধিকার রক্ষা করা অর্থাৎ ভারতের যেকোনো স্থানে বসবাসকারী নাগরিকদের কোন অংশের যদি পৃথকভাবে নিজস্ব সংস্কৃতি থাকে তাহলে তাদের ও সংস্কৃতির সংরক্ষণের অধিকার থাকবে।
• 30 নং ধারা : সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনার অধিকার থাকবে।
• 41 নং ধারা : রাষ্ট্র তার আর্থিক ক্ষমতা ও উন্নয়নের সীমার মধ্যে সব নাগরিকদের জন্য কর্ম ও শিক্ষার ব্যবস্থা করবে এবং সেইসঙ্গে বেকার যুবক , বৃদ্ধ মানুষ , অসুস্থ এবং অক্ষম মানুষদের সরকারি সাহায্য দান করা হবে ; অর্থাৎ নাগরিকদের কর্ম , শিক্ষা ও অনুদানের ব্যবস্থা করবে।
• 45 নং ধারা : সংবিধান চালু হওয়ার দিন থেকে 10 বছরের মধ্যে 14 বছর বয়স পর্যন্ত সব ছেলেমেয়েদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা করা হবে ; অর্থাৎ বাধ্যতামূলক এবং অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা।
• 46 নং ধারা : তপশিলি জাতি উপজাতি এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর জন্য শিক্ষাগত ও আর্থিক প্রগতির ব্যবস্থা করবে রাষ্ট্র এবং তারা যাতে কোনরকম শোষণের শিকার না হয় সেদিকেও নজর দেবে রাষ্ট্র।
• 63 নং ধারা : বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় , আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং তদনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলিকে জাতীয় গুরুত্ব প্রদান।
• 64 নং ধারা : ভারত সরকারের আংশিক এবং সম্পূর্ণ আর্থিক সাহায্যের বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয় গুরুত্ব প্রদান করা ।
• 65 নং ধারা : বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পেশাগত , বৃত্তিগত ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দান এবং বিশেষ গবেষণায় উন্নতি , অপরাধ অনুসন্ধানে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সহায়তা দানের কেন্দ্রগুলিতে জাতীয় গুরুত্ব প্রদান।
• 66 নং ধারা : উচ্চ শিক্ষা , গবেষণা , বিজ্ঞান ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলির মানোন্নয়ন ও সংযোগ সাধনের দায়িত্ব কেন্দ্রের।
• 67 নং ধারা : মনুমেন্ট , প্রাচীন ঐতিহাসিক সৌধ এবং পুরাতত্ত্ব সম্পর্কিত স্থান যা পার্লামেন্টের আইন প্রণয়নের মাধ্যমে জাতীয় গুরুত্ব প্রদান।
• 337 নং ধারা : ইঙ্গ ভারতীয় বিদ্যালয়ের সাহায্য প্রদান করা।
• 340 নং ধারা : ভারতের রাষ্ট্রপতি সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মানুষদের সমীক্ষার জন্য প্রয়োজন মতো কমিশন নিয়োগ করতে পারেন অর্থাৎ পশ্চাৎপদ শ্রেণীর অবস্থা অনুসন্ধানে কমিশন নিয়োগ করা ।
• 343 নং ধারা : হিন্দি ভাষায় হবে সরকারি ভাষা । তবে সংবিধান প্রণয়নের 15 বছর পর্যন্ত সরকারি কাজে ইংরেজি ভাষা ব্যবহৃত হবে অর্থাৎ ভারত সরকারের সরকারি ভাষা দেবনাগরী হরফে হিন্দি ভাষা।
• 346 নং ধারা : আন্তঃরাজ্য বা কেন্দ্র-রাজ্য যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সরকারি ভাষা টা গ্রহণ করবে ।
• 347 নং ধারা : রাজ্যের যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ যদি বিশেষ কোনো ভাষাকে সরকারি কাজে ব্যবহার করতে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানাই , রাষ্ট্রপতি সেই ভাষাকে রাজ্যের সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশ দিতে পারেন।
• 351 নং ধারা : হিন্দি ভাষার উন্নতি ও প্রসার ভারত সরকারের দায়িত্ব , তাই হিন্দি ভাষার শিক্ষা প্রদান করতে হবে।
1976 সালে সংবিধানের 42 তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে শিক্ষাকে যৌথ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে । সংবিধানের মৌলিক কর্তব্য 51 (1) নং ধারা অনুসারে পিতামাতা এবং অভিভাবকদের কর্তব্য হল 6 বছর থেকে 14 বছর বয়সের শিশুকে বিদ্যালয় পাঠানো, না পাঠালে তার বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।