Wednesday, 19 March 2025

মুদালিয়ার কমিশন (1952-53) Mudaliar Commission (1952-53)

 মুদালিয়ার কমিশন (1952-53)

Mudaliar Commission

Secondary Education Commission (1952-1953)


মুদালিয়ার কমিশন (1952-53), মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন নামে পরিচিত । এটি ভারতে মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মূল্যায়ন ও উন্নতির জন্য গঠিত হয়েছিল।মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ. লক্ষ্মণস্বামী মুদালিয়ারের সভাপতিত্বে ভারত সরকার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাই তার নাম অনুসারে মুদালিয়ার কমিশন (1952-53) নামে পরিচিত।


  •  মুদালিয়ার কমিশনের উদ্দেশ্য :


A. মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মূল্যায়ন এবং উন্নতির পরামর্শ দেওয়া।

B. মাধ্যমিক শিক্ষাকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সহ জাতীয় চাহিদা পূরণ করা।

C. বৃত্তিমূলক এবং বহুমুখী শিক্ষা চালু করা যা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পেশার জন্য সজ্জিত করতে পারে।

D. শিক্ষার মান এবং পরীক্ষা পদ্ধতি উন্নত করা।


  •  মুদালিয়ার কমিশনের মূল সুপারিশ:


 1. মাধ্যমিক শিক্ষার কাঠামো:

 মুদালিয়ার কমিশন 7 বছরের মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সুপারিশ করেছিল , যেমন : 

 A. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের 3 বছর (শ্রেণী 6-8)

 B. উচ্চ বিদ্যালয়ের 4 বছর (ক্লাস 9-12)


 এটি পরে কোঠারি কমিশন দ্বারা 10+2 সিস্টেমে পরিবর্তন করা হয়েছিল।


 2. পাঠ্যক্রম সংস্কার :

 একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ পাঠ্যক্রম প্রস্তাবিত করা হয় : 

 A. মূল বিষয়: মাতৃভাষা, ইংরেজি, সামাজিক অধ্যয়ন, সাধারণ বিজ্ঞান, গণিত।

 B. ঐচ্ছিক বিষয়: বৃত্তিমূলক বিষয় যেমন কৃষি, বাণিজ্য, চারুকলা এবং কারিগরি শিক্ষা।

 C. নৈতিক ও নাগরিকত্ব শিক্ষা: মূল্যবোধ এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রচার করা।


 3. শিক্ষার বহুমুখীকরণ : 

 ছাত্রদের আগ্রহ এবং কর্মজীবনের চাহিদার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন স্ট্রীম চালু করা হয়েছে: 

 A. একাডেমিক স্ট্রিম: যারা উচ্চ শিক্ষা চালিয়ে যেতে চাই  তাদের জন্য।

B.  প্রযুক্তিগত প্রবাহ: প্রকৌশল এবং শিল্প দক্ষতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা।

C. কৃষি প্রবাহ: কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য।

 D. বাণিজ্যিক প্রবাহ: ব্যবসা, বাণিজ্য এবং বাণিজ্যে ক্যারিয়ারের জন্য।


 4. শিক্ষণ পদ্ধতি: 

তাত্ত্বিক শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক  শিক্ষাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এছাড়াও প্রকল্প-ভিত্তিক শিক্ষা, সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি এবং বাস্তব-জীবনের প্রয়োগ। কর্মশালা এবং গ্রুপ আলোচনার মাধ্যমে সুপারিশকৃত কার্যকলাপ-ভিত্তিক শিক্ষা।


 5. পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন :

 বাহ্যিক পরীক্ষার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা।শিক্ষার্থীদের উপর চাপ কমাতে চূড়ান্ত পরীক্ষার উপর জোর কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।ক্রমাগত মূল্যায়ন সিস্টেমের চালু করার কথা বলা হয়েছে।


 6. শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও কল্যাণ : 

 শিক্ষকদের জন্য ভাল বেতন এবং কাজের অবস্থার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। শিক্ষকদের জন্য বৈজ্ঞানিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতির উপর জোর দিয়েছেন। দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য  ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের সুপারিশ করা হয়েছে।


 7. গাইডেন্স এবং কাউন্সেলিং: 

 বিদ্যালয়ে বৃত্তিমূলক নির্দেশ দানের কথা বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শিক্ষা এবং কর্মজীবনের পথ বেছে নিতে সাহায্য করার জন্য ক্যারিয়ার কাউন্সেলর নিয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


 8. অবকাঠামো উন্নয়ন: 

 এর সাথে সুসজ্জিত স্কুল নির্মাণের প্রস্তাবিত: 

 লাইব্রেরি ,ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য বিজ্ঞান পরীক্ষাগার এবং কারিগরি প্রশিক্ষণের জন্য কর্মশালা। শারীরিক শিক্ষার জন্য খেলার মাঠের কথা বলা হয়েছে।


 9. জাতীয় সংহতি ও নৈতিক শিক্ষা :

 নৈতিক শিক্ষা ও সুনাগরিক হওয়ার জন্য পাঠ্যসূচিতে জাতীয় সংহতি, গণতন্ত্র এবং ভারতীয় সংস্কৃতির পাঠ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।


  •  মুদালিয়ার কমিশনের প্রভাব :

ভারতে মাধ্যমিক শিক্ষার আধুনিকীকরনে প্রভাবিত করেছে। বিদ্যালয়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেন। কোঠারি কমিশনকে অনুপ্রাণিত করে , যা পরবর্তীতে 10+2+3 ব্যবস্থা চালু করে। রোট লার্নিং থেকে দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষায় ফোকাস স্থানান্তর করতে সাহায্য করেছে।

Sunday, 16 March 2025

রাধাকৃষ্ণান কমিশন Radhakrishnan Commission (University Education Commission, 1948-49)

রাধাকৃষ্ণান কমিশন 
 Radhakrishnan Commission
 (University Education Commission, 1948-49)

রাধাকৃষ্ণান কমিশন ভারত সরকার কর্তৃক 4 নভেম্বর, 1948-এ ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান এর সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।তিনি একজন বিশিষ্ট দার্শনিক, পণ্ডিত এবং  ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ছিলেন । এই কমিশন স্বাধীন ভারতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাব্যবস্থা পরীক্ষা , আধুনিকীকরণ ও মান উন্নত করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এই কমিশন স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রথম শিক্ষা কমিশন ।

• রাধাকৃষ্ণান কমিশনের প্রধান সুপারিশ (Major Recommendations of the Radhakrishnan Commission) : 

1. উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : 

আধ্যাত্মিক, বৌদ্ধিক এবং নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ করা।বৈজ্ঞানিক মেজাজ এবং যুক্তিবাদী চিন্তা ভাবনার বিকাশ করা। জাতীয় সংহতি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে উৎসাহিত করা। প্রশাসন, শিল্প এবং শিক্ষার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল এবং নৈতিকভাবে সুস্থ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।

2. উচ্চ শিক্ষার কাঠামো : 

এই কমিশনে 12+3 সিস্টেমের প্রস্তাব করেছে, যেখানে:

12 বছরের স্কুল শিক্ষা (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) এবং স্নাতক ডিগ্রির জন্য 3 বছরের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা।

এছাড়াও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গবেষণা  স্পেশালাইজেশন অনুযায়ী অনুসরণ করা হবে ।

এই কমিশন  বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একটি বহু-স্তর ব্যবস্থারও সুপারিশ করেছে অর্থাৎ, গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কৃষি-ভিত্তিক শিক্ষার প্রচারের জন্য। পেশাগত ও শিল্প শিক্ষার জন্য কারিগরি প্রতিষ্ঠান। বৈজ্ঞানিক এবং উন্নত অধ্যয়নের জন্য গবেষণা-কেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয়।

3. শিক্ষার মাধ্যম : 

কমিশন আপাতত উচ্চশিক্ষায় ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি মাতৃভাষা তথা ভারতীয় ভাষাকেও গুরুত্ব দিয়েছে।

4. শিক্ষক প্রশিক্ষণ : 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। প্রতিভাবান ব্যক্তিদের আকৃষ্ট করার জন্য উচ্চতর বেতন এবং আরও ভাল কাজের অবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে।  এছাড়াও শিক্ষকদের পাঠদান ও গবেষণা উভয় দিকেই মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

5. গবেষণা এবং বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন : 

উদ্ভাবনী প্রচারের জন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত গবেষণাকে উৎসাহিত করা।

স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত (STEM :-Science, Technology, Engineering, Mathematics)) ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

6. পরীক্ষার সংস্কার : 

এই কমিশন চলমান রোট-লার্নিং সিস্টেমের সমালোচনা করেছে এবং সুপারিশ করেছে:

অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন এবং একটি মনোবিজ্ঞানসম্মত পরীক্ষা ব্যবস্থার। চূড়ান্ত পরীক্ষার গুরুত্ব হ্রাস করে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ এবং প্রকল্প ভিত্তিক মূল্যায়ন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে।

7. নারী শিক্ষা :

এই কমিশন জোর দিয়েছিল যে জাতীয় অগ্রগতির জন্য মহিলাদের উচ্চ শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহিলা কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়েছে।

8. গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন :

 কৃষি, গ্রামীণ শিল্প এবং স্থানীয় উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আধুনিক শিক্ষার সাথে ঐতিহ্যগত জ্ঞানকে একীভূত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

9. বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন ও প্রশাসন : 

বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক বিষয়ে সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার সুপারিশ করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

10. অর্থসংস্থান এবং সরকারী ভূমিকা : 

শিক্ষার জন্য সরকারী তহবিল বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য 1956 সালে  একটি স্বাধীন সংস্থা  বিশ্ববিদ্যালয় অনুদান কমিশন (UGC) প্রতিষ্ঠা করা হয়।

• রাধাকৃষ্ণান কমিশনের শিক্ষাগত গুরুত্ব : 

ভারতে আধুনিক উচ্চ শিক্ষা গঠনে এই কমিশন  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে । যেমন :

  1. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা নিয়ন্ত্রণের জন্য 1956 সালে UGC (বিশ্ববিদ্যালয় অনুদান কমিশন) প্রতিষ্ঠিত হয়।

 2. গবেষণা ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা হয়েছে। 

 3. কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষার উন্নয়নে উৎসাহিত করা।

 4. বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য সরকারী তহবিল বৃদ্ধির সুপারিশ করা। 

 5. একাডেমিক স্বাধীনতা উন্নীত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হ্রাস করা।

• রাধাকৃষ্ণান কমিশনের সমালোচনা : 

তার অবদান সত্ত্বেও, কিছু সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা গেছে:      

 1.  শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে ইংরেজি ধরে রেখে ঔপনিবেশিক প্রভাব অব্যাহত রাখা। 

2.পরীক্ষার সংস্কার বাস্তবায়ন ধীরগতির ছিল। 

3.গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আশানুরূপ গড়ে ওঠেনি।

4. প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য উচ্চ শিক্ষার ব্যবহার বাড়ানোর জন্য দৃঢ় পদক্ষেপের অভাব।

• উপসংহার :

 রাধাকৃষ্ণান কমিশন (1948-49) ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কমিশনগুলির মধ্যে একটি। এটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ভিত্তি স্থাপন করে, গুণমান, গবেষণা এবং স্বায়ত্তশাসনের উপর গুরুত্ব প্রদান করে। ভারতে উচ্চ শিক্ষার সংস্কারের নীতি নির্দেশের ক্ষেত্রে এর অনেক সুপারিশ আজও প্রাসঙ্গিক।

CLASS: XII

SEMESTER : III

NEW SYLLABUS 

Saturday, 31 December 2022

শিশুশিক্ষা ও শিশু মনস্তত্ব - 4 (Child Psychology and Pedagogy) OBJECTIVE QUESTIONS

  শিশুশিক্ষা ও শিশু মনস্তত্ব - 4

(Child Psychology and Pedagogy) 

 OBJECTIVE QUESTIONS :

1. প্রাচীনকালে শিক্ষার মূল লক্ষ্য কী ছিল ? 

উ : জ্ঞান অর্জন করা ।

2. প্রাচীনকালের শিক্ষার্থীদের কোন চর্চার উপর গুরুত্ব দেওয়া হত ?

 উ : বৌদ্ধিক চর্চা । 

3. বর্তমানে শিক্ষার লক্ষ্য কী ? 

উ : শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশসাধন ।

 4. অতিরিক্ত কার্যাবলি বলতে কী বােঝেন ?

উ : পাঠক্রম - বহির্ভূত কার্যাবলি ।

5. সর্বাঙ্গীণ বিকাশ বলতে কোন কোন বিকাশকে বােঝায় ?

উ: দৈহিক , মানসিক , সামাজিক , ক্ষোভিক , নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশ । 

6. ব্রতচারী ও এন.সি.সি , কোন ধরনের বিকাশে সহায়তা করে ? 

উ : শারীরিক বিকাশে । 

7. গানবাজনা , আবৃত্তি , অভিনয় , বিতর্ক কী ধরনের বিকাশে সহায়তা করে ?

উ: মানসিক বিকাশে । 

8. শৃঙ্খলা গঠনে সহায়তা করে এমন দুটি সহপাঠক্রমিক কাজের নাম লিখুন ।

 উ : ব্রতচারী ও এন.সি.সি .। 

9. বিদ্যালয়ে ‘ সেন্ট জনস অ্যাম্বুলেন্স কোর ’ ছাত্র - ছাত্রীদের কোন ধরনের মনােভাব গড়ে তােলে ? 

উ : সামাজিক - সেবামূলক মনােভাব । 

10. “ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে সমস্ত উদ্দীপক শিশুকে উদ্দীপিত করে তাদের সমষ্টি হল পরিবেশ ” —এই উক্তিটি কার । উ : মনােবিদ স্টোনের । 

11. পৃথিবীর সমস্ত সমাজে মনের ভাব প্রকাশ করা হয় কীসের মাধ্যমে ?

উ: ভাষা । 

12. জাতীয় সাক্ষরতা মিশন(NLM) কবে স্থাপিত হয় ?

 উ : ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ৫ ই মে ।

 13. ভারত সরকারের দ্বারা গৃহীত নিরক্ষরতা দূরীকরণের একটি কর্মসূচির নাম লিখুন । 

উ: জাতীয় সাক্ষরতা মিশন । 

14. পশ্চিমবঙ্গে কবে থেকে সাক্ষরতা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে ?

উ: ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ।

15. জাতীয় সাক্ষরতা অভিযানে কত বছর বয়সি লােকদের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে ? 

উ : ১৫ থেকে ৫০ বছর বয়সি লােকদের । 

16.  3 Rs ' কী ? 

উ : Reading ( পঠন ) , Writing ( লিখন ) এবং Arithmetic . ( গণিত ) । 

 17. শিক্ষা ’ শব্দটি সংস্কৃত কোন ধাতু থেকে এসেছে ?

উ:  ‘ শাস্ ’ ধাতু । 

18. “ বিদ্যা ’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী ? ? 

19. এডুকেয়ার ’ ( Educare ) কথার অর্থ কী ?

 উ : লালনপালন করা , পরিচর্যা করা । 

20. “ এডুসিয়ার ’ ( Educere ) কথার অর্থ কী ? 

উ: নির্দেশনা দান করা , নিষ্কাশন করা । 

21. 'এডুকেটাম ' ( Educatun ) শব্দের অর্থ কী ?

উ: শিক্ষাদানের কাজ । 

22. ‘ স্বর্ণকণিকা - শূন্য - ভাণ্ডার তত্ত্বের অপর নাম কী ?

উ:  আহরণ মতবাদ ।

23. ‘ সা বিদ্যা যা বিয়ে ' — কথাটির অর্থ কী ?

উ: যা মানুষকে মুক্তিলাভে সহায়তা করে , সেই হল বিদ্যা । 

24. কৌটিল্যের মতে শিক্ষার অর্থ কী ?

 উ : দেশমাতৃকার সেবার জন্য প্রশিক্ষণ এবং জাতির প্রতি প্রীতি ।


Sunday, 11 July 2021

শিক্ষার ধারণা কয় প্রকার ও কি কি শিক্ষার ধারণা গুলি আলোচনা করো। Discuss the Concept of Education : Narrow Meaning and Wider Meaning of Education

 

শিক্ষার ধারণা : সংকীর্ণ অর্থ ও ব্যাপক অর্থ 

Concept of Education : Narrow Meaning and Wider Meaning


 শিক্ষা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে হলে শিক্ষার সংকীর্ণ অর্থ ও ব্যাপক অর্থ আমাদের গোচরে আনা দরকার ।জন্মের পর থেকে মানুষ শিক্ষাগ্রহণ করে আসছে । অবারিত অভিজ্ঞতা প্রতিনিয়ত তার জ্ঞান ভান্ডারটিকে বৃদ্ধি করে চলেছে । এক্ষেত্রে কখনও পরিকল্পনামাফিক , আবার কখনও পরিকল্পনাহীন ভাবে সে শিক্ষাগ্রহণ করছে । ব্যক্তি যখন ইচ্ছার দ্বারা পরিচালিত হয়ে সচেতনভাবে ও পরিকল্পনা সহকারে শিক্ষাগ্রহণ করে , তখন শিক্ষার অর্থ সংকীর্ণ হয়ে পড়ে । আর যখন পূর্ব - পরিকল্পনা বা সচেতনতা ছাড়াই সে শিক্ষাগ্রহণ করে তখন শিক্ষার অর্থ হয় ব্যাপক ।

             নিম্নে উভয় প্রকার অর্থ নিয়েই আলােচনা করা হল - 

 ( ক ) শিক্ষার সংকীর্ণ অর্থ  :

(Narrow Meaning of Education) :

 সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা হল একটি সচেতন এবং নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া । এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য হল ব্যক্তির সুপ্ত সম্ভাবনাসমূহের বিকাশ সাধন করা । মূলত এই শিক্ষার দ্বারা শিশুর মনকে ভারাক্রান্ত করে তােলা হয় । মানুষ দীর্ঘদিন শিক্ষার সংকীর্ণ জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে যে বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে , অর্থ সম্পর্কে ধারণা তা যে কোনও উপায়ে শিশুদের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেওয়াই হল সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার মূল নীতি । এই ধরনের শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে কোনও বিশেষ আর্থ - সামাজিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তৈরি করে দেওয়া হয় । নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে এই শিক্ষা সীমাবদ্ধ থাকে । এছাড়া নির্দিষ্ট পাঠক্রমের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সচেতনভাবে এই শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে ।

                 অধ্যাপক ম্যাকেঞ্জি , ব্যক্তির ক্ষমতাকে বিকশিত ও অনুশীলন করার জন্য সচেতনভাবে পরিচালিত প্রচেষ্টাকে শিক্ষার সংকীর্ণ অর্থ বলেছেন । প্রয়ােজন এবং পূর্ব পরিকল্পনার ছাপ থাকায় এ ধরনের শিক্ষাকে সংকীর্ণ বলা হয় ।

 * শিক্ষার সংকীর্ণ অর্থে ধারণার বৈশিষ্ট্য :

(Charecterstics of Narrow meaning of Education ) :

         শিক্ষাকে সংকীর্ণ অর্থে গ্রহণ করার ফলে তার মধ্যে কতকগুলি বৈশিষ্ট্য মূর্ত হয়ে ওঠে । এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল 

 ( ১ ) জ্ঞান বৃদ্ধি : 

 সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিশুর জ্ঞান ভান্ডারটিকে বৃদ্ধি করা । অর্থাৎ শিশুকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পারদর্শী করে তােলা । এক্ষেত্রে সমাজের বয়স্ক ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে শিশুদের উপর সচেতনভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে । নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পাঠ্যসূচি অনুযায়ী পূর্বনির্ধারিত সময় ধরে এই শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে । 

 ( ২ ) সামাজিক স্বীকৃতি :

 সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার একটি সামাজিক স্বীকৃতি আছে । সমাজ ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা প্রদানের মাধ্যমে এই স্বীকৃতি প্রদান করে । পরীক্ষার মাধ্যমে শিশু কতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে তা যাচাই করা হয় । তারপর শিশুর শিক্ষামূলক প্রচেষ্টাকে সার্টিফিকেটের মাধ্যমে স্বাগত জানানাে হয় । এই ধরনের শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল যে কোনােভাবে ডিগ্রি , ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেটের অধিকারী হওয়া ।

( ৩ ) মানৰীয় সম্পর্কের অভাব :

  এই ধরনের শিক্ষায় কোনও মানবীয় সম্পর্ক গড়ে ওঠার অবকাশ থাকে না । এখানে শিক্ষক - শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হল দাতা - গ্রহীতার । শিক্ষক হলেন পাতা আর শিক্ষার্থী হল গ্রহীতা । শিক্ষক যে জ্ঞান দান করেন তা শিক্ষার্থী গ্রহণ করে নিষ্ক্রিয়ভাবে , ঠিক কলতলায় বসানাে কলসির মতাে । কলসির যেমন শুধুমাত্র জল গ্রহণ করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না , শিক্ষার্থীরও তেমনি জ্ঞান অর্জন করা ছাড়া আর কোনও ভূমিকা থাকে না । শিক্ষকের কাজ হল তার নিজস্ব পরিপূর্ণ জ্ঞান ভান্ডার থেকে এক একটি কণা দিয়ে শিক্ষার্থীর শূন্য ভান্ডারটিকে পুরণ করা । এই ধারণার উপর ভিত্তি করে শিক্ষাক্ষেত্রে কতকগুলি মতবাদ গড়ে উঠেছে । যেমন — স্বর্ণথলির তত্ত্ব , জলের নলের তত্ত্ব ইত্যাদি । 

 ( ৪ ) চাহিদা অবহেলিত :

 ও প্রতিটি শিক্ষার্থীর বিকাশের একটি স্বতন্ত্র গতিপথ আছে । এই ধারণাটিকে এখানে স্বীকার করা হয় না । শিক্ষার্থীরও যে একটি নিজস্ব গঠন প্রচেষ্টা থাকতে পারে কিংবা তারও যে নিজস্ব চাহিদা আছে — তার কোনও মুল্য এখানে দেওয়া হয় না । শিক্ষার্থীকে ভাবা হয় এক তাল মাটি হিসাবে এবং শিক্ষককে ভাবা হয় ছাঁচ হিসাবে । শিক্ষক তার নির্দিষ্ট ছাঁচে শিক্ষার্থীকে গড়ে তােলার চেষ্টা করেন । এখানে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের কোনও মর্যাদা দেওয়া হয় না ।  

( ৫ ) প্রয়ােজনমাফিক :

 সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা হল প্রয়ােজনমাফিক । প্রয়ােজনের তাড়নায় কোনও বিশেষ বিষয়ে অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা অর্জন করাই হল এর মূল উদ্দেশ্য । প্রয়ােজন অনুযায়ী কোনও বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার মধ্যেই এই শিক্ষা সীমাবদ্ধ । এই শিক্ষার গুরুত্ব প্রয়ােজন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পেতে শুরু করে । নতুন ধরনের প্রয়ােজনের তাগিদে আবার নতুন করে অভিজ্ঞতা অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা চলে । পূর্বের অভিজ্ঞতাটি তখন গুরুত্ব হারায় । 

 ( ৬ ) অপরিবর্তনীয় ও গতিহীন  :

এই ধরনের শিক্ষা অপরিবর্তনীয় ও গতিহীন । সমাজের বিবর্তনের ধারার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এটি পরিবর্তনশীল নয় । কিন্তু শিক্ষা এককভাবে একটি গতিধর্মী প্রক্রিয়া । এই প্রক্রিয়ায় গতিধর্মিতা না থাকলে তার কোনও উপযােগিতা থাকে না । ফলে বাস্তবক্ষেত্রে এই শিক্ষা তার প্রয়ােজনীয়তা হারায় । আর এই ধরনের শিক্ষার ফলে শিক্ষার্থীও বাস্তব পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয় ।

                  উপরিউক্ত আলােচনার ভিত্তিতে সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার ক্ষেত্রে যে বৈশিষ্ট্যগুলি প্রকটভাবে ফুটে ওঠে , তা হল—  

( ১ ) সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ । 

( ২ ) বিশেষ বিষয়ের জ্ঞান অর্জনের মধ্যেই নির্দিষ্ট থাকে এই শিক্ষা । উপসংহার 

 ( ৩ ) এই শিক্ষা মানুষ সচেতনভাবে গ্রহণ করে থাকে । 

( ৪ ) শিক্ষার অঙ্গ হিসাবে এই শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের স্বীকৃতি জানানাে হয় । 

( ৫ ) এই শিক্ষা নির্দিষ্ট কোনও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেওয়া হয় ।

              সুতরাং উক্ত বৈশিষ্টগুলির ভিত্তিতে বলা যায় যে ,

অপরিবর্তনীয় শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক - শিক্ষার্থীর মধ্যে দাতা - গ্রহীতার সম্পর্কের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীর নিজস্ব চাহিদা ও আগ্রহকে উপেক্ষা করে জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে মানসিক উৎকর্ষতা বিধানের জন্য যে শিক্ষা দেওয়া হয় , তাই হল সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা ।

 

 ( খ ) শিক্ষার ব্যাপক অর্থে ধারণা :

(Wider meaning of Education ) :

 ব্যাপক অর্থে শিক্ষা বলতে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকে বােঝানাে হয় না । এই শিক্ষা সমাজের জীবনধারার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত । প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সামাজিক পরিবেশের সামগ্রিক প্রভাব হল এই শিক্ষা ।

 অধ্যাপক ম্যাকেঞ্জি ব্যাপক অর্থে শিক্ষা সম্পর্কে বলেছেন যে ,

এটি একটি সাধারণ প্রক্রিয়া যার দ্বারা ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন হয় এবং এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির সঙ্গে তার সম্পর্ক , এমনকী যে বিশ্বে সে বসবাস করে সেই বিশ্বের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক অনুধাবন করতে মজার ব্যাপক সমর্থ হয় ।

                 রেমন্ট শিক্ষার ব্যাপক অর্থ প্রসঙ্গে বলেছেন যে ,

এই অর্থ সম্পর্কে ধারণা শিক্ষা শৈশব থেকে পরিপক্কতার স্তর অবধি একটি আত্মপ্রকাশের প্রক্রিয়া , যার সাহায্যে মানুষ তার নিজের শারীরিক , মানসিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশ সাধনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতিবিধানে সক্ষম হয় । 

                   হর্নে ( Horne ) আবার ব্যাপক অর্থে শিক্ষাকে অন্যভাবে প্রকাশ করেছেন । তার কাছে ব্যাপক অর্থে শিক্ষা হল উন্নত ধরনের সঙ্গতি বিধানের ক্ষমতা । 

            ব্যাপক অর্থে শিক্ষা সম্পর্কে মূল কথা হল যে ,

এই শিক্ষা এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষের অভিজ্ঞতার প্রসারণ ঘটে । এই শিক্ষা ব্যক্তিগত এবং সমাজ - জীবনে সর্বদা উন্নয়ন ঘটাবার চেষ্টা করে । আর এরই ফলে মানুষ সুষ্ঠু সমাধানের পথ খুঁজে পায় এবং আচরণ ধারার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি সাধনে সমর্থ হয় ।

 *  শিক্ষার ব্যাপক অর্থে ধারণার বৈশিষ্ট্য :

(Charecterstics of Wider meaning of Education ) :

 নিম্নে ব্যাপক অর্থে শিক্ষার বৈশিষ্টগুলি আলােচনা করা হল - 

 ( ১ ) জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া :

 ব্যাপক অর্থে শিক্ষা সীমিত পরিবেশে সীমিত সময়ের প্রশিক্ষণ নয় । এটি একটি জীবনব্যাপী ছেদহীন প্রক্রিয়া । ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে এই শিক্ষা শুরু হয় এবং মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকে । অর্থাৎ এই শিক্ষার পরিধি / হল জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত । এজন্যই বলা হয় যে , যতদিন বাঁচি ততদিন শিখি । সমগ্র জীবন জুড়ে এই শিক্ষাপ্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে । 

 ( ২ ) চাহিদা স্বীকৃত : 

এই ধরনের শিক্ষায় কোনও অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীর উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয় না । শিক্ষার্থী এখানে আত্মপ্রচেষ্টা এবং আত্মসক্রিয়তার মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাগ্রহণ করে । এই ধরনের শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যালয় বা শিক্ষকের কোনও ভূমিকা নেই , এমনকী পাঠক্রম বা আনুষ্ঠানিক নিয়ম - কানুনেরও সঙ্গে কোনও সম্পর্ক থাকে না । 

( ৩ ) বাস্তব অভিজ্ঞতা :

 ব্যাপক অর্থে শিক্ষা অর্জিত হয় বাস্তব সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে । অবাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যে জ্ঞান আহরণ করা হয় , তা কখনােই স্থায়ী হয় না । শিক্ষা বাস্তব পরিস্থিতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা লাভ করে । প্রকৃতপক্ষে সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে ব্যক্তি যে সমস্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করে তাই হল শিক্ষা । এই ধরনের অভিজ্ঞতা কোনও না কোনও ধরনের শিক্ষা অর্জনে সাহায্য করে ।

 ( ৪ ) সার্থক সঙ্গতিবিধান :

 সদা - পরিবর্তনশীল জগতের সঙ্গে সার্থকভাবে সঙ্গতিবিধান করতে সাহায্য করে ব্যাপক অর্থে শিক্ষা । কারণ মানুষ জীবনের চলার পথে যে সমস্ত বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে সেগুলিই সঙ্গতি বিধানের ক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করে । আবার ব্যক্তিকে তার অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য পরিবেশের তাগিদ অনুযায়ী আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে হয় এবং পুরােনাে আচরণ পরিবর্তন করে নতুন আচরণ ধারা অর্জন করতে হয় । আচরণের ক্ষেত্রে এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ , পরিবর্তন ও পুনর্গঠনের নাম হল শিক্ষা । 

( ৫ ) ক্রমবিকাশের প্রক্রিয়া :

 ব্যাপক অর্থে শিক্ষা ব্যক্তির বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার সঙ্গে অভিন্ন । এ প্রসঙ্গে ডিউই বলেছেন যে , শিশুর শিক্ষা তার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সমার্থক । এটি একটি স্বতঃপ্রণােদিত এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়া । প্রত্যেক শিশু কতকগুলি সম্ভাবনা নিয়ে জন্মায় । ক্রমবিকাশের ধারার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সম্ভাবনাগুলির পরিস্ফুরণ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে । এই বিকাশের মাধ্যমেই শিশু তার অভীষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হয় এবং প্রতিকুল পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতিবিধানে সমর্থ হয় ।

           উপরিউক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপক অর্থে শিক্ষার বৈশিষ্ট্যের যে সমস্ত পরিচয় পাওয়া যায় , তা হল— 

 ১ ) ব্যাপক অর্থে শিক্ষা কোনােরূপ সুনির্দিষ্ট নিয়ম - বহির্ভূতভাবে উপসংহার সম্পাদিত হয় ।

( ২ ) এই ধরনের শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনও ধারা অনুসরণ করা হয় না ।

 ( ৩ ) কোনও নির্দিষ্ট পাঠক্রম অনুযায়ী এই শিক্ষা সম্পন্ন হয় না । 

( ৪ ) এই শিক্ষা চলে অচেতনভাবে । 

( ৫ ) জীবনের প্রয়ােজনে সকল প্রকার অভিজ্ঞতাই অর্জিত হয় এই শিক্ষার মাধ্যমে ।

                            সুতরাং এই বৈশিষ্ট্যগুলির ভিত্তিতে বলা যায় যে ,

ব্যাপক অর্থে শিক্ষা হল ব্যক্তির জীবনব্যাপী ক্রমবিকাশের এক ছেদহীন প্রক্রিয়া যা নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা অচেতনভাবে অর্জনের মাধ্যমে তাকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সুষ্ঠু ও সার্থক সঙ্গতিবিধানে এবং সমাজের বহুমুখী দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে । শিক্ষা হল শিশুর উপর সমাজের পরিকল্পনাপ্রসূত প্রভাবের সমষ্টি যা তার ব্যক্তিসত্তার চরম বিকাশ সাধনের মাধ্যমে জীবনের পরম সত্যের উপলব্ধিতে সহায়তা করে ।

শিক্ষা কি ? "শিক্ষা" এবং "Education" শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ লেখো ।What is "EDUCATION" ? Meaning of Education.

   "শিক্ষা" বা "Education"


 ‘ শিক্ষা ’ বা ‘ এডুকেশন ’ বলতে কী বােঝায় , সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে গেলে সবার আগে শিক্ষা এবং এডুকেশন ’ শব্দ দুটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ জানা প্রয়ােজন । 

"শিক্ষা" শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ :

 সাহিত্য আকাদেমি কর্তৃক প্রকাশিত ‘ বঙ্গীয় শব্দকোষ ’ অনুযায়ী "শিক্ষা" শব্দটি সংস্কৃত "শিক্ষ " ধাতু থেকে এসেছে । এর অর্থ হল "বিদ্যাগ্রহণ" , "শিক্ষণ বা শেখা" । আরও ব্যাখ্যা করে বলা যায় , শিক্ষকের সাহায্যে পঠনপাঠন ও সু - অভ্যাসের দ্বারা প্রকৃত মানুষ গড়ে তােলার প্রক্রিয়াই হল শিক্ষা ।

 বাংলা ভাষায় "শিক্ষা" শব্দের সমার্থক হিসেবে ‘ বিদ্যা ’ শব্দটিও ব্যবহৃত হয় । "বিদ্যা" কথাটি সংস্কৃত ‘ বিদ ’ ধাতু থেকে এসেছে । "বিদ" কথাটির অর্থ হল "জ্ঞান অর্জন করা" বা "জানা" । এক্ষেত্রে বিদ্যার অর্থ হয়েছে কোনাে কিছু সম্পর্কে জ্ঞান বা কৌশল আয়ত্ত করা । 

 "Education"  শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ :

"Education" শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ভাষাতত্ত্ববিদরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন । এইসব মতামতকে চারটি ভাগে ভাগ করে আলােচনা করা যায় । যথা -

 1. প্রথম মত : 

"শিক্ষা'র ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘ Education ' শব্দটি লাতিন শব্দ "Educatio" থেকে গৃহীত হয়েছে। "Educatio" কথাটির উৎপত্তি ঘটেছে দুটি শব্দের সংমিশ্রণে । শব্দ দুটি হল "E" এবং "Duco" । এর অর্থ হল ‘ থেকে ’ ( from বা out of ) এবং "Duco" র অর্থ হল অন্তনিহিত কোনাে কিছুকে প্রকাশ করা ( to draw out ) । এই মত অনুসরণ করে বলা যায় , "Education" বা ‘ শিক্ষার অর্থ হল শিশুর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনাগুলিকে প্রকাশিত হতে সাহায্য করা । 

2. দ্বিতীয় মত : 

"Education" শব্দটির উৎপত্তি ঘটেছে লাতিন শব্দ "Educare" থেকে । "Educare" শব্দের অর্থ হল লালনপালন করা ( to bring up ) , পরিচর্যা করা ( to nourish ), উদ্দীপিত করা বা জাগিয়ে তোলা ( to raise ) ইত্যাদি । সুতরাং এই মত অনুযায়ী , শিক্ষা হল শিশুকে অপরিণত শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত লালনপালন বা পরিচর্যা দ্বারা জীবনধারণের জন্য উপযােগী দক্ষ ও কৌশল অর্জন সাহায্য করা শিশুর মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা থাকে , তাকে সুপ্তাবস্থা থেকে জাগিয়ে তােলা এবং জনপথ পরিচালিত করার প্রক্রিয়াই হল শিক্ষা ।

 3. তৃতীয় মত :

 "Education" শব্দটির উদ্ভব ঘটেছে লাতিন শব্দ "Educere" থেকে । "Educere" শব্দের অর্থ হল নির্দেশ দান করা ( to lead out ) , প্রকাশ করা ( to draw out ) ইত্যাদি । শিক্ষাবিদগনের এই মত অনুযায়ী , শিক্ষা হল নির্দেশ দানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সুপ্ত গুণাবলিকে প্রকাশ করে শিক্ষার্থীকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করা।

4. চতুর্থ মত :

 "Education" কথাটি এসেছে লাতিন শব্দ "Educatum" থেকে । "Educatum" শব্দটির অর্থ হল শিক্ষাদানের কাজ ( teaching ) । এই অর্থে শিক্ষা বলতে বােঝায় , শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে বিকশিত করা । 


                     Education- এর ব্যুৎপত্তিগত চার ধরনের মতবাদকে সংক্ষিপ্ত আকারে সাজালে , "Education" বা "শিক্ষা" বলতে বা বােঝায় , তা হল - 

1. শিক্ষার্থীদের মধ্যেকার সম্ভাবনাগুলির বিকাশ ঘটিয়ে , তাদের যথাযথ প্রকাশে সহায়তা । 

2. শিক্ষার্থীর উপযুক্ত প্রতিপালনের দ্বারা তার মধ্যেকার সুপ্ত সম্ভাবনাগুলিকে জাগ্রত করা ও পরিচর্যার দ্বারা তাকে জীবনপথে অগ্রসর হতে সাহায্য করা । 

3. শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাকে প্রকাশ করে , তাকে যথােপযুক্ত নির্দেশ দিয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য । 

4. উপযুক্ত শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে বিশেষ বিষয়ে শিক্ষিত করে তােলা ।

 

    শিক্ষার সর্বাত্মক সংজ্ঞা 

(Comprehensive Definition of Education)

শিক্ষার পরিধি বিস্তৃত হওয়ায় ব্যাপক অর্থে শিক্ষাকেই আজ প্রকৃত শিক্ষা বলে গ্রহণ করা  হয়েছে । তাই আধুনিক কালের শিক্ষাবিদ , দার্শনিক ও মনােবিদরা শিক্ষার তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক সমন্বয় ঘটিয়ে প্রকৃত শিক্ষার রূপদান করেছেন । তাদের বিবরণ অনুযায়ী — 

যা মানুষকে কুসংস্কারমুক্ত করে , উদার করে , মার্জিত করে , পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যবিধানে সাহায্য করে , এককথায় দায়িত্বশীল সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তােলে , তাই হল শিক্ষা  । সেই অর্থে শিক্ষা হল মানুষের জীবনব্যাপী এক বিরামহীন প্রক্রিয়া যার সাহায্যে মানুষের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ ঘটে এবং মানুষ সমাজের সংরক্ষণ ও অগ্রগতিতে সহায়ক হয় ।




মুদালিয়ার কমিশন (1952-53) Mudaliar Commission (1952-53)

 মুদালিয়ার কমিশন (1952-53) Mudaliar Commission Secondary Education Commission (1952-1953) মুদালিয়ার কমিশন (1952-53), মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন...